• E-paper
  • English Version
  • মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৫ পূর্বাহ্ন

×

কেসিসির ৩৩ বছরের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ অঙ্কের বাজেট

  • প্রকাশিত সময় : মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৩
  • ১৬৮ পড়েছেন

#২০২৩—২৪ অর্থ বছরের জন্য এক হাজার ৮২ কোটি ৯৯ লাখ টাকার বাজেট প্রস্তাবিত
#উন্নয়নমূলক খাতে কেসিসির নিজস্ব তহবিল হতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬১ কোটি ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা
#ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং পয়নিস্কাশন ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে
# বাজেটে নতুন কোন কর আরোপ করা হয়নি
# নাগরিক সেবা সম্প্রসারনকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে
#কেসিসিতে জবাবদিহিতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে

খুলনা সিটি কর্পোরেশন ২০২৩—২৪ অর্থ বছরের জন্য এক হাজার ৮২ কোটি ৯৯ লাখ ১৯ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে। যা খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৩৩ বছরের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ অঙ্কের বাজেট। কেসিসি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক সোমবার দুপুরে নগর ভবনের শহিদ আলতাফ মিলনায়তনে এ বাজেট ঘোষণা করেন। কাউন্সিলর, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা, কেসিসির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা—কর্মচারী এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সাথে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে মতবিনিময় করেন। প্রস্তাবিত এ বাজেটে নাগরিক সেবা এবং নগরীর সমস্যা সমাধানের দিকে গুরুত্ব বেশী দেয়া হয়েছে। এ বাজেটে কেসিসির নিজস্ব তহবিল হতে উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে। তবে সামনে জাতীয় নির্বাচনের পর নতুন করে সরকার গঠনের পর উন্নয়নের মাত্রা কতটা কার্যকর তা লক্ষ্য করা যাবে বলে মনে করছেন নাগরিক নেতারা। বর্তমানে রাশিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে অনেক দেশ আর্থিক মন্দার সম্মুখীন হলেও বাংলাদেশ সরকার আন্তরিক প্রচেষ্টায় চলমান প্রকল্পে বরাদ্দ কমিয়ে প্রকল্পগুলো চলমান রেখেছে। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের বাজেট অধিবেশনে সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, কেসিসির নিজস্ব আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়াও সরকার ও বিভিন্ন দাতা সংস্থার প্রতিশ্রম্নতি এবং জনগনের প্রত্যাশার বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়েছে। তথ্য সূত্রে, প্রস্তাবিত এ বাজেটে রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৬ কোটি ৫২ লাখ ৩৩ হাজার টাকা এবং সরকারি বরাদ্দ ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা হতে উন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩৬ কোটি ৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। গত ২০২২—২৩ অর্থবছরে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৮৬১ কোটি ৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা। সংশোধিত বাজেটে যার আকার দাঁড়িয়েছে ৬৯৭ কোটি ৭৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার ৮১ শতাংশ। উক্ত বাজেটে রাজস্ব তহবিলের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১৯২ কোটি ১১ লাখ ৩৮ টাকা। যা সংশোধিত বাজেটে দাঁড়িয়েছে ২৮২ কোটি ৯৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা। নিজস্ব তহবিলে অর্জনের হার ১৪৭ শতাংশ। উন্নয়ন তহবিল তথা সরকারি অনুদান ও দাতা সংস্থার বিশেষ প্রকল্পে বিগত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৬৬৮ কোটি ৯৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। কিন্তু পাওয়া যায় ৪১৪ কোটি ৭৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে অর্জনের হার ৬২ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজটের বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে— এ বাজেটে নতুন কোনো কর আরোপ করা হয়নি। বকেয়া পৌরকর আদায়, নবনির্মিত সকল স্থাপনার ওপর প্রচলিত নিয়মে কর ধার্য এবং নিজস্ব আয়ের উৎস সম্প্রসারণ। যেমন—মার্কেট, দোকানঘর, আয়বর্ধক স্থাপনা নির্মাণ ও কর্পোরেশনের সীমানা সম্প্রসারণের মাধ্যমে কর্পোরেশনের আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এটি একটি উন্নয়নমুখী বাজেট। এ বাজেটে শহরের সড়ক ও ড্রেনেজ তথা জলাবদ্ধতা নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য খাত ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বাজেটে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের ওপর এ বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাজেটে নাগরিক সেবা সম্প্রসারণ ও সেবার মান উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বাজেটে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন, পার্ক, ধর্মীয় উপাসনালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং কেসিসির বিভিন্ন দপ্তর আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় আনা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাজেটে ডেঙ্গু মোকাবেলায় মশক নিধন কার্যক্রম এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে যে ক্ষতি নিয়মিত হচ্ছে তা মোকাবেলা, অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের স্বনির্ভর করে গড়ে তোলাসহ বস্তি এলাকার রাস্তাঘাট, ড্রেন, ল্যাট্রিনসহ শিক্ষার মান সম্প্রসারণ করার দিক নির্দেশনা এ বাজেটে আছে। সিটি মেয়র জানান, ২০২৩—২০২৪ অর্থবছরে জাতীয় এডিপিতে কেসিসির ৩টি প্রকল্পে ৪৯৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা চলতি অর্থ বছরে পাওয়া যাবে। তিনটি প্রকল্প হচ্ছে— খুলনা সিটি কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত ও উন্নয়ন, খুলনা মহানগরীতে ড্রেনের ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং খুলনা সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন। এছাড়া প্রস্তাবিত জাতীয় এডিপিভুক্ত ১৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা সিটি কর্পোরেশন ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক জানান, খুলনা মহানগরীর সার্বিক উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণের জন্য আমরা সরকারের পাশাপাশি বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ইউএনডিপি, ইউনিসেফ, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, জার্মান উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এ সকল উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করি। তারাও আমাদের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছে। বর্তমানে বিভিন্ন দাতা সংস্থার ১৯টি উন্নয়ন প্রকল্প খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় চলমান রয়েছে। ২০২৩—২৪ অর্থবছরে এসব প্রকল্পে ১৭৯ কোটি ৪৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকার উন্নয়ন সহায়তা পাওয়া যাবে এমন আশা করা হচ্ছে। কেসিসি মেয়র বলেন, খুলনা মহানগরীকে সর্বাঙ্গীণ সুন্দর তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত করতে আমাদের আন্তরিকতা এবং প্রচেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই। যে কোনো উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন অর্থের। অর্থ সংস্থানের জন্য একটি স্ব—শাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে খুলনা সিটি কর্পোরেশন শুধু সরকারি বা বিদেশি সাহায্য ও ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে পারে না। তাকে নিজস্ব আয়ের ওপর নির্ভর করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চিন্তা করতে হবে। এটা আজ সময়ের দাবি। এজন্য প্রয়োজন সকল শ্রেণীর নাগরিকের পরিপূর্ণ আন্তরিকতা ও সহযোগিতা। কর্পোরেশনের যেমন দায়িত্ব রয়েছে নগরবাসীর নাগরিক স্বাচ্ছন্দের ব্যবস্থা করা, তেমনিভাবে নাগরিকদেরও কর্তব্য রয়েছে কর্পোরেশনকে তার কাজে সার্বিক সহযোগিতার হাত প্রশস্ত করা। তাই আমি আপনাদের মাধ্যমে কর্পোরেশনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নিয়মিত কর পরিশোধসহ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সর্বাত্মক সহায়তা করার জন্য খুলনা নগরবাসীকে আহ্বান জানাই। এদিকে, সাবমারসিবল পাম্পের কারনে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার সমস্যার প্রশ্নের জবাবে সিটি মেয়র বলেন, অগভীর নলকূপকে সাবমারসিবল পাম্পে রূপান্তর করার জন্য এখাতে ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও আমি নাগরিকদের নিরুৎসাহিত করব এবং সাবমারসিবলের ক্ষতির দিকটা বিবেচনায় নিয়ে কাজ করা হবে। নাগরিক নেতা শেখ আশরাফুজ্জামান বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের বাজেট ঘোষনা দেয়া হয়েছে। বাজেটটির পরিকল্পনা সফল করতে পারলে নাগরিকরাই লাভবান হবেন। তবে সামনে নির্বাচন। নতুন সরকার গঠন করার পর পরিকল্পনাটি কতটা কার্যকর হবে, এটি দেখার বিষয়।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA